প্রতিটি মুমিন মহান আল্লাহর প্রিয় হতে চায়। তা হতে গেলে মহান আল্লাহর বিধি-বিধান সঠিকভাবে মানতে হবে। যেসব কাজে মহান আল্লাহ খুশি হন, তাতে বেশি বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে। কারো পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে ধারণা থাকলে তার কাছে যাওয়ার রাস্তা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তার আপন হওয়ার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তাই মহান আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী জীবন গঠন করতে হবে। নিম্নে মহান আল্লাহর প্রিয় কিছু জিনিসের তালিকা তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর প্রিয় নবী
মহান আল্লাহর প্রিয় হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যাঁকে সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবীকেই সৃষ্টি করা হতো না। মহান আল্লাহ তাঁর এই প্রিয় বন্ধুকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যা আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
মহান আল্লাহ তাঁর এই বন্ধুকে এতটাই ভালোবাসেন যে আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কাউকেও দান করা হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে এক মাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়। (২) গোটা পৃথিবী আমার জন্য পবিত্র ও নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যেকোনো লোক ওয়াক্ত হলেই নামাজ আদায় করতে পারবে। (৩) আমার জন্য গনিমতের সম্পদ হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফাআতের (সুপারিশের) অধিকার দেওয়া হয়েছে। (৫) সব নবী প্রেরিত হতেন শুধু তাঁদের সমপ্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৫)
আল্লাহর প্রিয় বান্দা
কিছু গুণ আছে, সেগুলো অর্জন করা গেলে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সেই বিশেষ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সেসব গুণ আছে, মহান আল্লাহ তাদেরও ভালোবাসেন। যেমন—‘আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)। পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৮)
‘আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২) ‘আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৬)
‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬)
‘আল্লাহ (তাঁর ওপর) নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)। ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৪২)
এ ছাড়া মানুষের উপকার করাও একটি মহৎ গুণ। যারা মানুষের উপকার করে, মহান আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস আছে যে এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে কিছু প্রশ্ন করেন। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা কে? জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণ মানুষের উপকার করে। (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ১৩৬৪৬)
যে বাক্যগুলো আল্লাহর প্রিয়
পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর প্রিয় কালাম। এই কালাম যারা পড়বে এবং তার ওপর আমল করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য মহান আল্লাহর এই পবিত্র কালাম সুপারিশ করবে।
হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) কিছু কালামের কথা উল্লেখ করেছেন, যা মহান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। সামুরাহ ইবনে জুনদাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয় কালাম চারটি—সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার (অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, (এক) আল্লাহ ছাড়া আর উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। ) এগুলোর যেকোনো শব্দ দ্বারা তুমি শুরু করো, এতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪৯৪)
যে আমল আল্লাহর প্রিয়
কিছু আমল আছে, যেগুলো আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তন্মধ্যে অন্যতম আমল হলো, গুরুত্বসহ সময়মতো নামাজ আদায় করা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা। ’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, ‘মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। ’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? ‘তিনি বলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। ’ তিনি আমাকে এ কথাগুলো বলেন, যদি আমি আরো প্রশ্ন করতাম তাহলে তিনি আরো অতিরিক্ত বিষয়ে বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫)
এ ছাড়া যেকোনো নেক আমল ধারাবিহকতা বজায় রেখে নিয়মিত করা হলেও তা আল্লাহর প্রিয় আমলে পরিণত হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কী? তিনি বলেন, ‘যে আমল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হয়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা সাধ্যের অতীত কাজ নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়ো না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৫)
আরও পড়ুন:
মামুনুল হককে খুলনার আদালতে হাজির করা হয়েছে
আগামী সপ্তাহে নতুন সরকার ঘোষণা করবে আফগানিস্তান
ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১
দামি হোটেলে সিদ্ধার্থ-শেহনাজের বিয়ে হত, গোপন ছিল সে খবর
আল্লাহর প্রিয় নাম
কিছু নাম এমন আছে, যেগুলো আল্লাহর প্রিয়। বিশেষ করে যে নামগুলোতে মহান আল্লাহর দাসত্ব ফুটে ওঠে। ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম হলো আবদুল্লাহ এবং আবদুর রহমান। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৯)
আল্লাহর প্রিয় জায়গা
পৃথিবীতে কিছু জায়গা মহান আল্লাহর বেশি প্রিয়। আর তা হলো মসজিদ, যেখানে মহান আল্লাহকে সিজদা করা হয়। এটি মহান আল্লাহকে সিজদা করার জায়গা হওয়ায় একে মসজিদ বলা হয়। বান্দা মহান আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে সিজদারত অবস্থায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে খারাপ জায়গা হলো বাজার। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)
পাঠকের মতামত